যেসব মানুষকে কষ্ট দিলে আল্লাহর আরশ কেঁপে ওঠে The people who hurt Allah's throne shook
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টির সেরা জীব ও সর্বোত্তম গঠনপ্রণালিতে মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন। এবং সমস্ত সৃষ্টির ওপর তাদের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।
সৃষ্টির সেরা জীব এ মানুষদের মধ্যে ৩ শ্রেণির মানুষকে কষ্ট দিলে কিংবা আঘাত করলে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালার আরশ কেঁপে ওঠেছে; বলেছেন স্বয়ং বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এসব মানুষ হলো তারা, যারা সৃষ্টিগতভাবেই অসহায়। আর তারা হলো- প্রতিবন্ধি, পাগল ও অসহায় নারী।
যাদের প্রতি ইহসান করলে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া ও পরকালে মানুষকে মুক্তির ব্যবস্থা করে দেবেন। অসহায় নারী, প্রতিবন্ধি ও পাগলদের প্রতি অত্যাচার-নির্যাতন করলে যেমন আল্লাহর আরশ কেঁপে ওঠে তেমনি তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করলে দুনিয়া ও পরকালের মুক্তিও সুনিশ্চিত।
যদিও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমাজের সব মানুষকে সমান দৃষ্টিতে দেখতেন তথাপিও তিনি প্রতিবন্ধি ও অসহায়দের অধিকারের ব্যাপারে খুব বেশি সজাগ ছিলেন। তিনি প্রতিবন্ধিদের বিশেষ মর্যাদা দিতেন। যার প্রমাণ হজরত বেলাল ও হজরত উম্মে মাকতুম রাদিয়াল্লাহু আনহুমা।
হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু মৃদু বাক প্রতিবন্ধি ছিলেন। তারপরও তিনি হজরত বেলালকে মসজিদে নববীর মুয়াজ্জিন হিসেবে নিয়োগি দিয়েছিলেন।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুমকে মদিনার অস্থায়ী শাসনকর্তা হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন। এমনকি তিনি যখনই তাকে (আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম) দেখতেন, তখনই বলতেন, ‘স্বাগতম জানাই তাকে, যার ব্যাপারে আল্লাহ আমাকে ভর্ৎসনা করেছেন।’
অন্ধ সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুমকে কোনো এক বিষয়ে তার কথার অগ্রাধিকার না দেয়ায় আল্লাহ তায়ালা সতর্কতামূলক আয়াত নাজিল করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘সে ভ্রুকুঞ্চিত করল এবং মুখ ফিরিয়ে নিল, কারণ তার কাছে অন্ধ লোকটি এল। তুমি কেমন করে জানবে, সে হয়তো পরিশুদ্ধ হতো অথবা উপদেশ গ্রহণ করত। ফলে উপদেশ তার উপকারে আসতো।’ (সূরা: আবাসা, আয়াত: ১-৪)।
এ আয়াত নাজিলের পর থেকে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিবন্ধিদের বিষয়ে আরো বেশি সতর্কতা অবলম্বন করেন। তাদের প্রতি ভালবাসা বাড়িয়ে দেন। তাদেরকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে থাকেন। আর প্রতিবন্ধিদের প্রতি ভালবাসা প্রদর্শন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্যতম সুমহান আদর্শও বটে।
মনে রাখতে হবে: প্রতিবন্ধি, পাগল, অসহায় নারী সমাজের মানুষদেরই একটা অংশ। তাদের বাদ দিয়ে সুন্দর সমাজ কল্পনা করা যায় না। তাদের প্রতি সহমর্মিতা দেখালে দুনিয়া ও পরকালের মুক্তি সুনিশ্চিত।
এসব অসহায় মানুষদের ন্যূনতম মৌলিক অধিকারগুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখা যেমন জরুরি তেমনি এগুলো তাদের অধিকার। তাই প্রতিবন্ধিদের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা দেখানো ও সহনুভূতিশীল হওয়ার কথা বলেছেন বিশ্বনবী। হাদিসে এসেছে-
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা ক্ষুধার্তকে খাবার দাও, অসুস্থ (প্রতিবন্ধি) ব্যক্তির খোঁজ খবর নাও এবং বন্দিদের মুক্ত করে দাও।’ (বুখারি)।
সুতরাং প্রতিবন্ধি, পাগল ও অসহায় নারীদের প্রতি অবিচার নয়। তাদের প্রতি সুবিচার করার মাধ্যমে আল্লাহর আজাব ও অসন্তুষ্টি থেকে বেঁচে থাকা জরুরি।
কেননা তাদের প্রতি বেখেয়াল হওয়ার কারণেই আল্লাহ তায়ালা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি সতর্কতামূলক ওহি নাজিল করেছিলেন।
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে প্রতিবন্ধি, পাগল ও অসহায় নারীদের প্রতি সহনুভূতিশীল হওয়ার পাশাপাশি তাদের অধিকারের প্রতি লক্ষ্য রাখার তাওফিক দান করুন। পবিত্র কোরআন-সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
No comments