দেরি করে ঘুম থেকে ওঠার কী কী বিপদ ?
সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে,
দেরি করে ঘুম থেকে ওঠার কারণে নানা মানসিক ও শারীরিক জটিলতার শিকার হতে হয়।
বিজ্ঞানীরা এই সংক্রান্ত গবেষণার জন্য চার ধরনের মানুষকে বেছে নিয়েছিলেন।
তাঁরা হল, যাঁরা প্রতিদিন নিয়মিত সকালে ওঠেন, যাঁরা মাঝে মধ্যে সকালে ওঠেন, যাঁরা মাঝে মাঝে দেরি করে ঘুমান এবং যাঁরা প্রতিরাতে নিয়মিত রাত জাগেন।
এই চারটি বিভাগে থাকা অংশগ্রহণকারীদের বয়স ছিল ৩৮ থেকে ৭৩ বছরের মধ্যে।
সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের এই সংক্রান্ত গবেষণাপত্রটি আন্তর্জাতিক ক্রোনোবায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে লেখা হয়েছে, যে সকল ব্যক্তি নিয়মিত সকালে ঘুম থেকে ওঠেন তাঁর গড় আয়ু রাতজাগা ব্যক্তিদের থেকে সাড়ে ছয় বছর বেশি। তবে এর সঙ্গে ব্যক্তির বয়স, লিঙ্গ, গোত্র, ওজন, আর্থসামাজিক অবস্থা, খাদ্যাভাস, লাইফস্টাইল ইত্যাদি নানা বিষয় জড়িত। এই সবগুলো বিষয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ হিসেব শেষেই দেখা যায়, সকালবেলায় যাঁরা ঘুম থেকে ওঠেন, তাঁদের অকাল মৃত্যুর হার সবচেয়ে কম। আর যাঁদের দেহ ঘড়ি অনিয়মে চলে তাঁদের এই ঝুঁকি বাড়তেই থাকে।
রাত জাগার বদ অভ্যেস যাঁরা গড়ে তুলেছেন তাদের ৯০ শতাংশ বিভিন্ন মানসিক ব্যাধির শিকার হল। ৩০ শতাংশের থাকে ডাইবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি। এছাড়া স্নায়বিক সমস্যা থেকে শুরু করে অন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়।
সুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রোনোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ম্যালকম ভনের মতে, রাত জাগার এই সমস্যা ইদানীং জনস্বাস্থ্য সমস্যার রূপ নিয়েছে যা এড়িয়ে যাওয়ার কোনও উপায় নেই। এই সমস্যা দূর করতে, অর্থাৎ সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের সঙ্গে দেহঘড়ির সামঞ্জস্য ঘটাতে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে— সে বিষয়ে আরও গভীর গবেষণার প্রয়োজন বলে জানান তিনি। নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ক্রিস্টেন নুটসন জানান, অবেলায় খাওয়া-দাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব, ব্যায়াম না করা, রাতে ঘুম থেকে ওঠা বা মাদক সেবন এধরনের বদঅভ্যাসের পেছনে প্রধান কারণ দীর্ঘদিনের মানসিক চাপ। এমন বিভিন্ন অনিয়মের ফলে মানুষ ঘুমের সময় ওলট পালট হয়ে যায় বলে জানান তিনি।
তবে রাত জাগার কারণে শরীর মন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে, এমনটাও ভাবার কোনও কারণ নেই বলে আশ্বস্ত করেছেন অধ্যাপক নুটসন। তিনি জানান, শরীরের ৪০ থেকে ৭০ শতাংশ জৈব প্রক্রিয়া বা দেহঘড়ির পরিচালনা নির্ভর করে জিনের বৈশিষ্ট্যের ওপর। বাকিটা বয়স ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশের ওপর নির্ভর করে। অর্থাৎ কিছু বিষয় আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আবার কয়েকটি ক্ষেত্রে চাইলেই পরিবর্তন আনা সম্ভব।
নিজের দেহঘড়িকে নিয়মের মধ্যে আনতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস দিয়েছেন ঘুম বিশেষজ্ঞরা:
১. শোবার জায়গাটা এমন হতে হবে যেখানে সূর্যের আলো সহজেই পৌঁচ্ছায় কিন্তু রাতের বেলায় অন্ধকার থাকে।
২. প্রতিরাতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে বিছানায় যাওয়া এবং সেটা যেন খুব দেরিতে না হয়।
৩. সুস্থ লাইফস্টাইলের জন্য যে অভ্যাসগুলো গড়ে তোলা প্রয়োজন সেগুলো আয়ত্তে আনতে নিজের প্রতি কঠোর হতে হবে। ঘুমের সময়ের সঙ্গে কোনও অবস্থাতেই আপোষ করা চলবে না। দিনের কাজ দিনেই শেষ করতে হবে।
৪. ঘুমানোর সময় মোবাইল ও ল্যাপটপকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে।
No comments